একপাল পুরুষ লেগেছে
জেনে রেখো, সিফিলিস
(দেখি দেখি, দেখতে না পাই)
আইনস্টাইন বলেছেন - মানসিক সমস্যা হল একই কাজ বারবার ঘুরেফিরে করে যাওয়া এবং ভিন্ন ভিন্ন ফলাফল আশা করা। জাহের ওয়াসিম আর য়চিনপুরের অ্যাটিচিউড দেখে সেই কথাটা বারবার করে মনে পড়ে গেল। এই দুই ব্যাক্তি তসলিমা নাসরিনের নাম করে কতগুলো ভুয়ো কবিতা ছাপিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটে। দাবি করছে সবক'টাই নাকি 'দেশ' পত্রিকা থেকে বেরুনো। 'দেশ' পত্রিকার কোন সংস্করণ থেকে নেয়া, কোথাও তার উল্লেখ নেই। এর মধ্যে এরা একটা ব্লগ খুলেছে, এবং সেখানে ভুয়ো কবিতাগুলো ছাপিয়েছে। ভুয়ো কবিতাগুলো এরকম -
মৌলবাদ ও আমি
মৌলবাদের হিংস কালো থাবায়
কাঁপছে জনমানুষ - বিশ্ব যৌনাংগ,
অদ্ভুত জ্বর ঘিরে রেখেছে মাতৃভূমি
দেহের সাদা স্তন।
মায়েদের আচলের ছায়ায়
এখন আর শীতলতা নেই
ছায়ার অন্তরালে থাকে কুৎসিত হায়েনা।
মৌলবাদের হীন রক্ত লেগে থাকে
কমোডের নোংরা আবর্জনার মত
যদিও ওসবের শেকড় আছে, মৌলবাদের তাও নেই।
মাতৃভূমির পিচ ঢালা পথে ওদের উলঙ্গ তলোয়ার
অশূচি অনুভূতি ঘিরে ধরে বাংলার জল, কোমল আশ্রয়ে।
মাতৃস্তন বঞ্চিত আমি
আমার দেশ আমার মা
যার স্তননিঃসৃত রস থেকে আমি বঞ্চিত
বঞ্চিত আমি টিউবাকৃতির যৌনাংগবিহীন নারীদের মত
যারা দুটি উঁচু পিরামিড নিয়েও পুরুষের সমাজতন্ত্রের শিকলে
খাঁচায় বন্দী বন্যপাখি।
বঞ্চিত আমি আমার দেশের মাটির গন্ধ থেকে
যে মাটিতে শহীদের মৃত আত্নার রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ে
যেমনি করে নারীদেহ থেকে মাসে মাসে কিছু অজ্ঞাত ব্যাংক বিল জমা পড়ে।
বঞ্চিত আমি স্বজাতির ঘৃনাভরা ভালোবাসা থেকে
যারা অদৃশ্য চুরি নিয়ে
আমার বাক্যহননে মত্ত হয়ে থাকে।
অথচ আমার বাক্য ফ্রয়েড কিংবা লেনিনের ক্ষুরধার খঞ্চর হয়ে
ওদের বুককে রক্তাক্ত করে।
স্বজাতির পথে আমি দীর্ঘযাত্রায় চেয়ে থাকি
অথচ প্রতিদিন একটি করে চাকারবাহন চলে যায়;
আমাকে ছেড়ে অক্ষম পুরুষের মত
আমি মাতৃস্তন বঞ্চিত হয়ে পড়ে রই একা।
ছিদ্রযুক্ত প্রেম
এ যুগের প্রেম মানে কি নারীদেহের আনাচে কানাচে ঢুঁ মারা?
মথিত স্তনবৃন্তের কুৎসিত ছোয়া
ফোনের ছিদ্র দিয়ে যৌনভ্রমন?
কিংবা নারীর মাসভিত্তিক লোহের আস্বাদন?
তরুনী মেয়েদের অন্তর্বাসের মাপ নেয়া
অথবা প্রেমিকার গোপনাঙ্গে মৃদু চুম্বন?
ধর্ষন নাকি বিয়ে
বিয়ে নামক রীতিসিদ্ধ নারীধর্ষনকে ধিক্কার
যদিও অবলা নারীরা ধর্ষিত হতেই ভালোবাসে।
বাসর- যৌনাংগের ছানাছানি ব্যতীত আর কী বা?
নারীর লক্ষ বছরের আগলে রাখা পর্দা ফাঁটানোর আর্তনাদ-
পুরুষ যন্ত্রটির আনন্দোউল্লাস!
সংসার- নারীর জন্য সমাজতন্ত্রের গঠিত শিংকল
যারা একটি যৌনাংগ দিয়ে সমগ্র পৃথিবী শাসন করে চলে।
মৌলবাদীরা বিয়ে করে ধর্ষন করে তাতে পাপ হয়না
কিন্তু অবিবাহিত ধর্ষকের মুন্ডুক ছিন্ন করতে ওদের বাধেঁনা।
নিশ্চুপ বালিকার বাসর
বাসর মানে অবলা কিশোরীস্তন নিয়ে নিষ্ঠুর পুরুষের
দু'হাতের ছানাছানি;
যৌনাংগের অস্হির আস্ফালন,
অন্ধকারে বালিকাগুলো নিঃশব্দ আর্তচিত্কার করে করে-
দিনে দিনে নারী হয়ে উঠে।
মাসিকের ডেট এলেও,
নারীঅংগগুলো মুক্তি পায়না
এইসব নির্যাতন থেকে।
মাসিকটা কেন যে নারীর একান্ত সম্বল করে পাঠালেন-
পুরুষতান্রিক বেকুব বিধাতা।
সুফিয়া আপারা নারীমুক্তি এনেছেন
অথচ নারীদেহ
আজও অবরূদ্ধ
সৈরাচারী পুরুষের- যৌনাংগের নিচে।
সত্যিকার নারীমুক্তি আসবে কবে?
নয় আর ঘরের কোণে
নারীর পদযাত্রা ক্রমে ধীরগতি হয়ে আসে
হাজার মাইল দীর্ঘবাঁধা চোখের কোণে ভাসে
তবু নারী এগিয়ে যাও
পুরুষের শিয়র থেকে অসীমে হারাও।
তোমাকে আজ দাঁড়াতে হবে, পুরুষতন্ত্র মাড়াতে হবে
হাজার বছরের শিংকল ছেড়ে পা দু'টো বাড়াতে হবে।
প্রেতাত্নার ন্যায় পুরুষের বক্ষতলে নয়
মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করতে হয়।
তুমি লজ্জার আবরণে আর কতকাল-
গৃহকোণের নারী ধর যুগের হাল।
অন্ধকার কোণ থেকে আর নয় আর্তচিৎকার
তোমার ইজ্জত নয় হারাবার।
মদির আহ্বানে
অন্ধকার রাত্রি আকাশে ঘন মেঘ আমি একা,
দীর্ঘদিন পাইনা মৌলবাদ ঘেরা স্বদেশের দেখা।
ধর্মের অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে ওরা দুর্গ গড়ে
এদের হাতে নারীর ইজ্জ্বত লুটে পড়ে।
পাপী বিধাতা এদের পাঠিয়েছে অস্ত্রস্বরূপ নিষ্ঠুর যৌনাংগ দিয়ে
যেখানে সতত নারী পিষ্ঠ হয় জিয়ে জিয়ে।
আমি তবুও স্বদেশের পানে দেয়ে থাকি
অনেক পাখিরই নীড়ে ফেরা বাকি।
ওখানে পড়ে আছে লাঞ্চিত মেয়েদের গোপন রক্ত
সারা দেশ আজ কলুষতায় আসক্ত।
কমিউনিজমের পেতাত্না বিশ্বে করেছে ভর
মেয়েদের স্তনে নেমে এসেছে ধর্ষনের জ্বর।
কোন দেশ কোন কাল পারেনি নারীর অশ্রু মুছে দিতে
এখনো অন্ধকারে পুরুষ টানে নারীর সালোয়ারের ফিতে।
এর একটাও তসলিমা নাসরিনের কবিতা না।
নেই, কিছু নেই
সত্যি সত্যি তসলিমা নাসরিনের লেখা কিছু কবিতা নিচে দিলাম -
(ফিরে যেতে চাই বারেবার, ডাকছে আমার ইচ্ছেগুলো)
মা, এবারের শীতে
শীত আসছে, উঠোনে শীতলপাটি বিছিয়ে এখন লেপ রোদে দেবার সময়।
মা আমার লেপ-কম্বল রোদে দিচ্ছেন, ওশার লাগাচ্ছেন, কোলবালিশে তুলো
ভরছেন - উঠোনে তুলো ধুনছে ধুনরিরা...
শীত এলেই মা'র এমন দম না ফেলা ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়।
এবারের শীতেও রোদে শুকোনো লেপ এনে বিছানায় গুছিয়ে রেখেছেন মা।
এবারের শীতেও আচারের বয়াম রোদে দিচ্ছেন,
এবারের শীতেও ভাপা পিঠে বানাবার হাঁড়ি ন্যাকড়া জোগাড় করছেন।
কার জন্য? কে আছে বাড়িতে যে কিনা সারা শীত লেপের তলায় গুটি মেরে, মনে
মনে চমৎকার চাঁদের আলোয়, অরণ্যে, কাঠখড় কুড়িয়ে আগুন তাপায়, আমি
ছাড়া!
কে আছে বাড়িতে যার জন্য মিনিট পর পর ধোঁয়া ওঠা চা, মুড়ি ভাজা, আর
দুপুর হতেই আম বা জলপাইয়ের আচার-
ভোরের খেজুর-রস আর পিঠেপুলি- কার জন্য!
এবারের শীতে আমি স্ক্যানডেনেভিয়ায়, বরফে আর অন্ধকারে ডুবে আছি
জানি, ফেরা হবে না আমার, মাও তো জানেন ফেরা হবে না, রোদ পড়া উঠোন
আর নকশি কাঁথায় ন্যাপথলিনের ঘ্রাণের ওপর পাশের বাড়ির বেড়াল এসে শোবে
এত জেনেও মা কেন রোদে দিচ্ছেন আমার কাঁথা-কাপড়, লেপ, কার্পাস তুলোর
বালিশ!
এত জেনেও মা কেন ডুকরে কেঁদে ওঠেন ফোনে, যখন আমি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত
থেকে সুখবর দিই- 'ভাল আছি'।
অবুঝ আমার মা, আঙুলের কড়ায় গোনেন দিন, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকেন
অপেক্ষায়। আর আচমকা প্রশ্ন করেন 'কখন আসছ তুমি? তুমি তো ঘুমোবে
এখানে, তোমার বিছানায়, গল্প শুনতে শুনতে নন্দীবাড়ির ভূতের আর বনের কাঠুরের আর
ব্যাং রাজকুমারের আর...
মা কি আগামী শীতেও আমার জন্য আবার রোদে দেবেন লেপ-তোশক, আচারের
বয়াম,
আর দরজায় টোকা পড়লে বঁটিতে মাছ রেখেই দৌড়ে দেখবেন আমি কি না!
(এই কবিতাটি "নির্বাসিত নারীর কবিতা"" কাব্যগ্রন্থে আছে)
(নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই)
তুমি একটা কবরে শুয়ে আছ
মা কাঁপছে শীতে, কেউ একটি লেপ পৌঁছে দিচ্ছে না মাকে,
মা'র ক্ষিদে পাচ্ছে, কেউ কোনো খাবারও খেতে দিচ্ছে না,
অন্ধকার গর্তে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মার
একটু আলো পেতে, হাওয়া পেতে, শুকনো জিভে একফোঁটা জল পেতে
কাতরাচ্ছে মা, বেরোতে চাইছে,
কেউ তাকে দিচ্ছে না।
মা ছিল মাটির,
জ্যান্ত মানুষগুলো সব পাথর।
মা তুমি একটি পাখি হয়ে এই পাথুরে পৃথিবী ছেড়ে
অন্য কোন গ্রহে কোনো পাখির দেশে চলে যাচ্ছ না কেন !
তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার, নাহোক।
তবু জানব তুমি ভাল আছ।
("নেই, কিছু নেই" থেকে নেয়া)
(বল না কতদিন আমি দেখি নাই তোমারে)
মায়ের কাছে চিঠি
কেমন আছ তুমি? কতদিন, কত সহস্র দিন তোমাকে দেখি না মা, কত সহস্র দিন তোমার কন্ঠ শুনি না, কত সহস্র দিন কোনো স্পর্শ নেই তোমার।
তুমি ছিলে, কখনও বুঝিনি ছিলে।
যেন তুমি থাকবেই, যতদিন আমি থাকি ততদিন তুমি - যেন এরকমই কথা ছিল।
আমার সব ইচ্ছে মেটাতে যাদুকরের মত। কখন আমার ক্ষিদে পাচ্ছে, কখন তেষ্টা পাচ্ছে, কি পড়তে চাই, কী পরতে, কখন খেলতে চাই, ফেলতে চাই, মেলতে চাই হৃদয়, আমি বোঝার আগেই বুঝতে তুমি।
সব দিতে হাতের কাছে, পায়ের কাছে, মুখের কাছে। থাকতে নেপথ্যে।
তোমাকে চোখের আড়ালে রেখে, মনের আড়ালে রেখে যত সুখ আছে সব নিয়েছি নিজের জন্য।
তোমাকে দেয়নি কিছু কেউ, ভালবাসেনি, আমিও দিইনি, বাসিনি।
তুমি ছিলে নেপথ্যের মানুষ। তুমি কি মানুষ ছিলে? মানুষ বলে তো ভাবিনি কোনোদিন,
দাসী ছিলে, দাসীর মত সুখের যোগান দিতে।
যাদুকরের মত হাতের কাছে, পায়ের কাছে, মুখের কাছে যা কিছু চাই দিতে, না চাইতেই দিতে।
একটি মিষ্টি হাসিও তুমি পাওনি বিনিময়ে, ছিলে নেপথ্যে, ছিলে জাঁকালো উৎসবের বাইরে নিমগাছতলে অন্ধকারে, একা। তুমি কি মানুষ ছিলে ! তুমি ছিলে সংসারের খুঁটি, দাবার ঘুঁটি, মানুষ ছিলে না।
তুমি ফুঁকনি ফোঁকা মেয়ে, ধোঁয়ার আড়ালে ছিলে, তোমার বেদনার ভার একাই বইতে তুমি, তোমার কষ্টে তুমি একাই কেঁদেছ। কেউ ছিল না তোমাকে স্পর্শ করার, আমিও না।
যাদুকরের মত সারিয়ে তুলতে অন্যের অসুখ-বিসুখ, তোমার নিজের অসুখ সারায়নি কেউ, আমি তো নইই, বরং তোমাকে, তুমি বোঝার আগেই হত্যা করেছি।
তুমি নেই, হঠাৎ আমি হাড়েমাংসেমজ্জায় টের পাচ্ছি তুমি নেই। যখন ছিলে, বুঝিনি
ছিলে। যখন ছিলে, কেমন ছিলে জানতে চাইনি। তোমার না থাকার বিশাল পাথরের তলে চাপা পড়ে আছে আমার দম্ভ।
যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি, সে কষ্ট আমাকেও চেয়েছি দিতে, পারিনি। কি করে পারব বল! আমি তো তোমার মত অত নিঃস্বার্থ নই, আমি তো তোমার মত অত বড় মানুষ নই।
(এই কবিতাটা কাব্যগ্রন্থ "খালি খালি লাগে" তে প্রকাশিত, নিচের ভিডিওটায় তসলিমা নাসরিনকে এই কবিতাটার ইংরেজী আবৃত্তি করতে দেখতে পারবেন)
(ভাল নেই, ভাল থেকো)
একবিন্দু মা
অনেকে আমার মা হতে চেয়েছে, অনেকে বাবা
অনেকে মামা কাকা খালা ফুপু
অনেকে যেসব বন্ধু, যাদের হারিয়েছি।
চেষ্টা চরিত্তির করে অনেকে বাবা হয়েছে অনেকটাই
কষ্টে সৃষ্টে মামা কাকা খালা ফুপু।
অনেকে বন্ধু হয়েছে নিমেষেই, কায়ক্লেশে নয়।
মা হতে অনেকে চেষ্টা করেছিল, মা হতে সেই অনেকের পর
আরও অনেকে চেষ্টা করেছিল
সেই আরও অনেকের পর অনেকে। দিনের পর দিন অকথ্য পরিশ্রম
করেছিল মা হতে তবু কেউ মা হতে পারেনি
ছিটেফোঁটা মা কেউ হতে পারেনি
এক ফোঁটা মা কেউ হতে পারেনি।
এক বিন্দু মা হতে পারেনি।
(এই কবিতাটা প্রকাশিত হয়েছিল কাব্যগ্রন্থ "ভালোবাসো ? ছাই বাসো" তে)
(মা নেই। আরা বছর আমি কাঁদলেই কার কী)
একটি অকবিতা
আমার মা যখন মারা যাচ্ছিলেন, সকালবেলা স্নান করে জামা জুতো পরে ঘরবার হলেন বাবা, চিরকেলে অভ্যেস। বড়দা সকালের নাস্তায় ছ'টি ঘিয়েভাজা পরোটা নিলেন, সঙ্গে কষানো খাসির মাংস, এ না হলে নাকি জিভে রোচে না তাঁর। ছোড়দা এক মেয়েকে বুকে মুখে হাত বুলিয়ে সাধাসাধি করছিলেন বিছনায় নিতে। সারা গায়ে হলুদ মেখে বসেছিলেন বড়বউদি, ফর্সা হবেন; গুনগুন করে হিন্দি ছবির গান গাইছিলেন, চাকরবাকরদের বলে দিয়েছেন ইলিশ ভাজতে, সঙ্গে ভুনা খিচুড়ি। ভাইয়ের ছেলেগুলো মাঠে ক্রিকেট খেলছিল, ছক্কা মেরে পাড়া ফাটিয়ে হাসছিল। মন ঢেলে সংসার করা বোন আমার স্বামী আর কন্যা নিয়ে বেড়ায়ে বেরোল শিশুপার্কে। মামারা ইতিউতি তাকিয়ে মা'র বালিশের তলে হাত দিচ্ছিল সোনার চুড়ি বা পাঁচশো টাকার নোট পেতে। খালি ঘরে টেলিভিশন চলছিল, যেতে আসতে যে কেউ খানিক থেমে দেখে নেয় তিব্বত টুথপেস্ট নয়তো পাকিজা শাড়ির বিজ্ঞাপন।আমি ছাদে বসে বসে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে নারীবাদ নিয়ে চমৎকার একটি কবিতা লেখার শক্ত শক্ত শব্দ খুঁজছিলাম।
মা মারা গেলেন।
বাবা ঘরে ফিরে জামাকাপড় ছাড়লেন। বড়দা খেয়ে-দেয়ে ঢেঁকুর তুললেন। ছোড়দা রতিকর্ম শেষ করে বিছানা ছেড়ে নামলেন। বড়বউদি স্নান সেরে মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ইলিশ ভাজা দিয়ে গোগ্রাসে কিছু খিচুড়ি গিলে মুখ মুছলেন। ভাইয়ের ছেলেগুলো ব্যাট-বল হাতে নিয়ে মাঠ ছাড়ল। স্বামী-কন্যা নিয়ে বোনটি শিশুপার্ক থেকে ফিরল। মামারা হাত গুটিয়ে রাখলেন। আমি ছাদ থেকে নেমে এলাম। ছোটরা মেঝের আসন পেতে বসে গেল, টেলিভিশনে নাটক শুরু হয়েছে। বড়দের এক চোখ মায়ের দিকে, আরেক চোখ টেলিভিশনে। মায়ের দিকে তাকানো চোখটি শুকনো, নাটকের বিয়োগান্তক দৃশ্য দেখে অন্য চোখে জল।
("জলপদ্য" কাব্যগ্রন্থে বেরিয়েছিল কবিতাটি)
(মানুষটি ছিল, মানুষটি নেই)
মা কষ্ট পেলে আমাদের কিছু যেত আসত না
আমার একটি মা ছিল,
চমৎকার দেখতে একটি মা,
একটি মা আমার ছিল
মা আমাদের খাওয়াত শোয়াত ঘুম পাড়াত,
গায়ে কোনও ধুলো লাগতে দিত না, পিঁপড়ে উঠতে না,
মনে কোনও আঁচড় পড়তে দিত না
মাথায় কোনও চোট পেতে না।
অথচ
মাকে লোকেরা কালো পেঁচি বলত,
আমরাও।
বোকা বুদ্ধু বলে গাল দিতাম মা'কে।
মা কষ্ট পেত।
মা কষ্ট পেলে আমাদের কিছু যেত আসত না।
আমাদের কিছুতে কিছু যেত আসত না,
মা জ্বরে ভুগলেও না,
মা জলে পড়লেও না,
মা না খেয়ে শুকিয়ে ত্যানা হয়ে গেলেও না,
মা'কে মা বলে মনে হত, মানুষ বলে না।
মা মানে সংসারের ঘানি টানে যে
মা মানে সবচেয়ে ভাল রাঁধে যে, বাড়ে যে,
কাপড়-চোপড় ধুয়ে রাখে গুছিয়ে রাখে যে
মা মানে হাড়মাংস কালি করে সকাল-সন্ধে খাটে যে
যার খেতে নেই, শুতে নেই, ঘুমোতে নেই
যার হাসতে নেই
যাকে কেবল কাঁদলে মানায়
শোকের নদীতে যার নাক অব্দি ডুবে থাকা মানায়
মা মানে যার নিজের কোনও জীবন থাকতে নেই।
মা ব্যথায় চেঁচাতে থাকলে বলি
ও কিছু না, খামোকা আহ্লাদ।
মরে গেলে মাকে পুঁতে রেখে মাটির তলায়,
ভাবি যে বিষম এক কর্তব্য পালন হল
মা নেই
আমাদের এতেও কিছু যায় আসে না।
(এই কবিতাটিও "জলপদ্যে"র )
(জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে)
আমার মনুষ্যত্ব
নিজের মাকে কখনও বলিনি ভালবাসি
অন্যের মাকে বলেছি,
নিজের মা'র অসুখ কোনওদিন সারাইনি,
অন্যের মা'র সারিয়েছি।
নিজের মা'র জন্য কাঁদিনি, অন্যের মা'র কষ্টে কেঁদেছি।
এই করে করে জগতের কাছে উদার হয়েছি।
তার পাশে কখনও বসিনি, যে ডাকত
একটি হাত ভুলেও কখনও রাখিনি তার হাতে,
একটি চোখ কখনও ফেলিনি সেই চোখে।
সবচেয়ে বেশি যে ভালবাসত, তাকেই বাসিনি
যে বাসেনি, তাকেই দিয়েছি সব, যা ছিল যা না ছিল
এই করে করে মহান হয়েছি,
মানুষের চোখে মানুষ হয়েছি।
(এই কবিতাটি "খালি খালি লাগে" কাব্যগ্রন্থের)
(ঠিক যেভাবে গেছ)
দুঃখবতী মা
মা'র দুঃখগুলোর ওপর গোলাপ-জল ছিটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল,
যেন দুঃখগুলো সুগন্ধ পেতে পেতে ঘুমিয়ে পড়ে কোথাও
ঘুমটি ঘরের বারান্দায়, কুয়োর পাড়ে কিম্বা কড়ইতলায়।
সন্ধেবেলায় আলতো করে তুলে বাড়ির ছাদে রেখে এলে
দুঃখগুলো দুঃখ ভুলে চাঁদের সঙ্গে খেলত হয়তো বুড়িছোঁয়া খেলা।
দুঃখরা মা'কে ছেড়ে কলতলা অব্দি যায়নি কোনওদিন।
যেন এরা পরম আত্মীয়, খানিকটা আড়াল হলে বিষম একা পড়ে যাবেন মা;
কাদায় পিছলে পড়বেন, বাঘে-ভালুকে খাবে, দুষ্ট জিনেরা গাছের মগডালে
বসিয়ে রাখবে মা'কে-
দুঃখগুলো মা'র সঙ্গে নিভৃতে কী সব কথা বলত...
কে জানে কী সব কথা
মা'কে দুঃখের হাতে সঁপে বাড়ির মানুষগুলো অসম্ভব স্বস্তি পেত।
দুঃখগুলোকে পিঁড়ি দিত বসতে,
লেবুর শরবত দিত, বাটায় পান দিত,
দুঃখগুলোর আঙুলের ডগায় চুন লেগে থাকত...
ওভাবেই পাতা বিছানায় দুঃখগুলো দুপুরের দিকে গড়িয়ে নিয়ে
বিকেলেই আবার আড়মোড়া ভেঙে অজুর পানি চাইত,
জায়নামাজও বিছিয়ে দেওয়া হত ঘরের মধ্যিখানে।
দুঃখগুলো মা'র কাছ থেকে একসুতো সরেনি কোনওদিন।
ইচ্ছে ছিল লোহার সিন্দুকে উই আর
তেলাপোকার সঙ্গে তেলোপোকা আর
নেপথলিনের সঙ্গে ওদের পুরে রাখি।
ইচ্ছে ছিল বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জলে, কেউ জানবে না,
ভাসিয়ে দেব একদিন
কচুরিপানার মতো, খড়কুটোর মতো, মরা সাপের মতো ভাসতে ভাসতে দুঃখরা
চলে যাবে কুচবিহারের দিকে...
ইচ্ছে ছিল
দুঃখগুলো মা'র সঙ্গে শেষ অব্দি কবর অব্দি গেছে,
তুলে নিয়ে কোথাও পুঁতে রাখব অথবা ছেঁড়া পুঁতির মালার মতো ছুড়ব
রেললাইনে, বাঁশঝাড়ে, পচা পুকুরে। হল কই?
মা ঘুমিয়ে আছেন, মা'র শিথানের কাছে মা'র দুঃখগুলো আছে,
নিশুত রাতেও জেগে আছে একা একা।
(এটাও "জলপদ্যে"র কবিতা)
ভুতের গল্প
(কি তোমার রুপের ঝলক)
জাহের ওয়াসিমের দেয়া একটা কবিতা প্রথম পড়েছিলাম সামহ্যয়ারইনে, সাথে সাথে প্রতিবাদ করেছিলাম। জুলাই মাসের পুরো এক সপ্তাহ গেছে আমার তসলিমা নাসরিনের দেশাত্মবোধক কবিতাগুলো টাইপ করে উঠতে। সেই কবিতাগুলো দিয়েছিলাম আমারব্লগে আর প্রথম আলো ব্লগেও। দেখিয়েছিলাম যে জাহের ওয়াসিমের দেয়া কবিতাটা তসলিমা নাসরিনের নয়, জাহেরেরই লেখা। সামহ্যয়ারইনে একসাথে অতগুলো কবিতা দেয়া যায়নি, তাই লিঙ্ক দিয়ে দিয়েছিলাম। কে জানে না, এরপর জাহের ওয়াসিম আমার ওপর বিষম ক্ষেপবে? রেগেমেগে সে আমাকে ভুল বানানে পত্র দিল ফেসবুকে -
এই বেকুব তোর সমস্যাটা কি?
অনেকদিন মনে হয় বানানি কাস না(বক্তব্য উদ্ধার করা যায় নি এই বাক্যের)
কবিতা পড়ছস কয় পিস জীবনে?
তুই ঢাকা কলেজের সামনে আয় আমি তোরে রেফারেন্স দিচ্ছি?
তোর তোর পাছা দিয়া দিমু
আমি উত্তরে লিখলাম -
বাহ! দারুণ মেসেজ! এটার স্ক্রীনশটটা আমার আন্দোলনে খুব কাজে লাগবে। থ্যাঙ্ক ইয়ু সো মাচ!
(অন্ধজনে দেহ আলো)
(এরপর আরও কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমার ফেসবুকের সে প্রোফাইলটা ডিস্যাবল্ড হয়ে যাওয়ায় স্ক্রীনশট দিতে পারলাম না। তবে যতদূর মনে পড়ে, সে লিখেছিল - তুই আয় না, আয়, ভয় নাই, তুই আয়.....আমি লিখেছিলাম, তা তো আসবই, আসব না কেন? অবশ্যই আসব, তবে তার আগে জেনে নেই আপনি কোন জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করেন! আল কায়েদা হলে এক প্রিপারেশন নিয়ে আসব, জেএমবি হলে আরেক প্রিপারেশন, হিযবুত তাহরীর হলে আরেক।.....সে লিখেছিল, আমি আল কায়দা না হিযবুত তাহরীর আইলেই বুঝতে পারবি, তুই আয়)
খবর জানিয়ে দিলাম সামহ্যয়ারইনে। খবর শুনে কালীদাস আমায় জানালেন জাহের ওয়াসিমের মানসিক বিকৃতির খবর।
কালীদাস বলেছেন: জাহের ওয়াসিম কে আমি জানিনা। তবে তার কান্ডকারখানা প্রথম দেখেছিলাম আশীষ এন্তাজ রবির কারেন্ট রিলেটেড হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠির পোস্টে। সে কাকে জানি গালিও দিয়েছিল, ঐটা আদৌ কোন লেখাই হয়নি, সবাই না বুঝে লাফালাফি করছে। ৩৮৪নাম্বার কমেন্ট-টা দেখুন, আগেও মনে হয় দুচারটা আছে! Click This Link কি ভাষা, কত সাহিত্য গিয়ান তাঁর। নিজে কিন্তু একলাইনও লেখেনি;)
এবং সে অনেকদিন থেকেই নীরব। ব্যান খেয়েছে না, সামহোয়ারইন ছেড়েছে, কে জানে?!
(মুরমুরকে না দেখ মুরমুরকে)
সেই লিঙ্কে গিয়ে জাহের ওয়াসিমের এই প্রবাদ প্রবচনগুলো আবিষ্কার করলাম -
জাহের ওয়াসিম বলেছেন: বিদ্যুত নিয়া নিম্নমানের একটা লেখা লিখেই উনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাচ্ছেন! আগে লিখতে শিখেন। আন্দাজে উন্দাজে দুম করে একটা কিছু লিখে ফেলবেন না। ফাউল লোক কোথাকার
(কী চমৎকার দেখা গেল)
জাহের ওয়াসিম বলেছেন:
comment by: এফ আই দীপু বলেছেন:
কামাল নামে একটা শব্দ আছে যার সন্ধি বিচ্ছেদ করলে এরকম দাঁড়ায় "কামের আগে আউট হয় যার মাল=কামাল"। উপাধিটা আপ্নের জন্য এ বছরের প্রথমেই বরাদ্ধ দেয়া হৈল। বিশ্বাস করেন, চলতি বছর এমন উপাধি অন্য কাউকে দেয়া হয়নাই। আশা করি কামাল নামেই আপনি প্রশান্তি পাইবেন। ধইন্যাবাদ।
ছাগু উপাধিটা তোর জন্য। বেশি কইরা মাল ফালাইয়া শান্তি অর্জন কর। তোদের মতো ছাগুতে দেশটা ভইরা গেলো। তোরা দেশে থাকার অবস্থা রাখস নাই। তোর মতো আবালরাই দেশটারে শেষ করলো। এইসব বালমার্কা পোস্ট তোদের কাছে অনেক কিছু।
(তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি............)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এরপর ভেবেছিলাম ঝামেলা মিটে গেছে। এরপর তো আর কেউই অস্বীকার করতে পারেনা যে ওই মহাকাব্যগুলো জাহের ওয়াসিমেরই লেখা। জাহেরের ভাষার নিজস্বতা দেখেই সে কথা বুঝে নেয়া যায়। কিন্তু ভূত তো অত সহজে শ্যাওড়াতলা ছেড়ে যায় না। বিক্রমের ঘাড় ছেড়ে বেতাল থাকে কি করে?
ঘুরে ঘুরে ওই এক বিন্দুতে ফেরা
য়চিনপুর, (যা মনে হয় জাহির ওয়াসিমেরই আরেক আইডি বা তার ছোট ভাইয়ের) একের পর এক আমার পোস্টগুলোয় মন্তব্য করে যেতে থাকল, সবক'টাতেই তসলিমা নাসরিনের নাম করে লেখা ভুয়ো কবিতার কোন না কোন লিঙ্ক। সম্ভবত এই পোষ্টেও সে একটা মন্তব্য করবে, এরপর যখন তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে পোষ্ট দেব, আবারও করবে। যা যা সে করেছে.........................................................................................
পোষ্টঃ তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে জাহের ওয়াসিমের মিথ্যাচার
য়চিনপুর বলেছেন:
তসলিমা নাসরিনের লেখা
Click This Link
য়চিনপুর বলেছেন:
জাহের ওয়াসিমের লেখা পড়ুনঃ
http://www.prothom-alo.com/detail/news/23028
(চোখ চলে যায় দেখব তারে)
পোষ্টঃ জনৈক এক তসলিমা নাসরিন বিদ্বেষী'র চরিত্র
য়চিনপুর বলেছেন: হেহেহে
(আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয়)
পোষ্টঃ ভালবাসা আর কতদূর ?
য়চিনপুর বলেছেন: ভাই তসলিমার একটা কবিতা দিলাম একটু দেইখেন
Click This Link
(তোমাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করে)
পোষ্টঃ তসলিমা নাসরিনের কয়েকটি অসাধারণ কবিতা
য়চিনপুর বলেছেন: ভাই তসলিমা আপুর কবিতা নিয়ে একটা ব্লগ সাইট খোলা হয়েছে।
http://www.toslimanasrin.blogspot.com/
পড়তে পারেন।
কমেন্ট দিন
য়চিনপুর বলেছেন: ওই বেটা তোর লজ্জা আছে? না থাকলে তস্লিমার লজ্জা পড়
(তারা দেখেও দেখে না, তারা বুঝেও বোঝে না, তারা ফিরেও না চায়)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার মেজাজ সপ্তম সুরে বাজতে থাকল। খুব ভাল করেই জানি ব্লগটা জাহের ওয়াসিম নাহয় য়চিনপুরের (কিম্বা জাহের ওয়াসিম ওরফে য়চিনপুরের) খোলা।তসলিমা নাসরিনের কোন দরকার নেই ব্লগ খুলে কবিতা লেখার। বহুত পত্রিকা প্রকাশনী তাঁর কবিতার জন্য ধর্না দিয়ে বসে আছে। সবচে বড় কথা হল, য়চিনপুর কয়েকদিন আগে ব্লগ খোলা নিয়ে সাহায্য কামনা করে পোস্টও দিয়েছিল সামহ্যয়ারে।
(চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে)
তবু গেলাম। এবং গিয়ে জাহের ওয়াসিমের অপূর্ব কাব্যপ্রতিভার জোস্না আবিষ্কার করলাম।
এবং সেই সাথে আবিষ্কার করলাম জাহের ওয়াসিমের অজ্ঞানতার লোগো।
(দেখা না দেখায় মেশা)
নামে অনেক কিছু আসে যায়
তসলিমা নাসরিনের নাম সেই লোগোতে এবং জাহের ওয়াসিমের মস্তিস্কে লেখা আছে Toslima Nasrin বানানে ।
(তাহারে দেখি না যে দেখি না)
দুনিয়াতে কোথাও এই বানানে তসলিমা নাসরিনের নাম লেখা হয় না। তসলিমা নাসরিনের নামের বানান দু'টি - ভারত উপমহাদেশে Taslima Nasreen আর ইউরোপে Taslima Nasrin. তসলিমা নাসরিন নিজে Taslima Nasreen বানানটিই বেশি ব্যবহার করেন।
(খারাপ জিনিস দেখতে নেই)
তাঁর ওয়েবসাইটে তাঁর নাম TASLIMA NASREEN/NASRIN.
তাঁর টুইটারে তাঁর নাম taslimanasreen.
(আমি দেখি নাই তোমারে)
(এখনো তারে চোখে দেখিনি, শুধু বাঁশি শুনেছি)
জাহের ওয়াসিম একবার গুগলে সার্চ দিয়েও দেখেনি, বই কবিতা পড়া তো দূরে থাক। Toslima Nasrin লিখে সার্চ দিলেও তো Showing results for Taslima Nasrin. Search instead for Toslima Nasrin কথাটা দেখার কথা, আমি তো তাই দেখছি!
( এসব দেখে আমার মনে হল, ফেসবুকে আমায় খুঁজে পেতেও নিশ্চয়ই জাহেরের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। আমার নামের বানান Tamoso. নিশ্চিতই Tomoso, Tomaso, Tomos, Tamas, Tumusu, Tomusu, Tumosu, Tomaso ইত্যাকার নানা কিছু লিখে শেষকালে সে Tamoso দিয়ে ট্রাই করে পেয়েছিল আমায়!)
আকাশের ঠিকানায়
এরপরে আসে তসলিমা নাসরিনের আকাশের ঠিকানা। জাহের ওয়াসিমের ব্লগের সীলমোহরে লেখা ঠিকানাটা হল toslimanasrin@gmail.com
আর তসলিমা নাসরিনের আসল ঠিকানাগুলো হল email@taslimanasrin.com,taslima.nasrin@gmail.com
তাঁর ওয়েবসাইটে একসময় taslima.nasrin@gmail.com ঠিকানাটা দেয়া থাকত। সেই সূত্র ধরে ফেসবুকে আমি তাঁর আসল অবস্থানটাও খুঁজে বের করেছিলাম। সেইখানে তাঁর নাম Taslima Nasreen লেখা।
(আমি একদিনও না দেখিলাম তারে)
(উড়াইয়া দেখ তাই)
(কে জানিত হবে আমারও এমন শুভ দিন, শুভ লগন)
(আমি চিনি গো চিনি তোমারে)
(ভুবন ভ্রমিয়া শেষে)
ফেসবুকে তাঁর ভক্তদের বৈঠকঘর আর অনুরক্তদের সমাবেশগুলোর নামেও হয় Taslima Nasrin নয় Taslima Nasreen.
(সাতটি রঙের মাঝে আমি মিল খুঁজে না পাই)
(এখনো তারে চোখে দেখি নি, শুধু বাঁশি শুনেছি)
Toslima Nasrin নামে যদিও কিছু বৈঠকখানা-টানা আছে, সেগুলোতে লোক বেশি নয়। বহুত ভুয়ো তসলিমা নাসরিনের আস্তানা আছে ফেসবুকে, তাদেরও নামে T এর পরে A ই ব্যবহার করা হয় বেশি। O খুব কম, যারা জানে না কিছুই, তারা এই বানানে লেখে। এবং জাহের ওয়াসিম তাদের একজন।
জিমেইল তো তসলিমা নাসরিনের ব্যক্তিগত, এই ঠিকানায় অনেক বেশি চিঠি আসে বলেই হয়তো তিনি সাইটের কোণেই একটা ইমেইল আইডি খুলে নিয়েছেন। এখন email@taslimanasrin.com ই দেখায় তাঁর সাইটে। কিন্তু এখনও অন্তর্জালের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আগের ঠিকানাটা। আন্তর্জাতিক লেখক সংগঠন পেনে'র সাইটেও রয়েছে ঠিকানাটা একটা খবরে।
(যাও পাখি বল তারে)
আমি শুধু একটা কথাই ভাবছিলাম, ওদের আল্লা মহম্মদ না ওদের মিথ্যে কথা বলতে নিষেধ করেছে? তাহলে এমনকি এই রমজানেও মিথ্যে বলল কেন ওরা?
লোকে যদি যা-ইচ্ছে-তাই বলে
বলো তাতে হচ্ছে কি কার কিছু?
সারা দুনিয়ায় ভুয়ো কবিতাগুলো ছড়িয়ে দেয়ার পণ করেছে জাহের। তাই নিজের ফেসবুকের দেয়ালে সেঁটে দিচ্ছে পোস্টার। আহারে, কেই বা আর প্রচার করবে, সে না করলে? লিখেছে তো সে-ই, প্রচারের দায়িত্বও তার। (কি জানি, এই রিপোর্ট পড়ে আবার উঠিয়ে ফেলবে কিনা পোস্টারগুলো)। তসলিমা নাসরিনকে হায়দ্রাবাদে মৌলবাদীরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল, তাদের সাথে জাহের যোগাযোগ করতে পারে। তারা জাহেরের মত এত বড় কোহিনূর হীরে পেয়ে লাফিয়ে উঠবে, আর আপসোস করবে কেন আগেই জাহেরের সাথে তাদের দেখা হল না। হলে তো মিশন হায়দ্রাবাদ সাক্সেসফুল হতে পারত। (নইলে তার আর কোন পোস্টের পোস্টার দেখা যাচ্ছে না কেন?)
(আমরা দেখেছি যারা বুনো হাঁস শিকারীর গুলির আঘাত
এড়ায়ে উড়িয়া যায় দিগন্তের নম্র নীল জ্যোৎস্নার ভিতর)
তারিখগুলোয় করে আতশ কাঁচ দিয়ে দেখুন ছবিগুলো-
২৩ অগাস্ট ২০১০
১৪ ও ১৫ অগাস্ট ২০১০
১৩ অগাস্ট ২০১০
০৮ অগাস্ট ২০১০
১০ এপ্রিল ২০১০
১৪ মার্চ ২০১০
১৫ জানুয়ারি ২০১০
০৩ জানুয়ারি ২০১০
২৬ ডিসেম্বর ২০০৯
২৫ ডিসেম্বর ২০০৯
১৩ ডিসেম্বর ২০০৯
নাহ, অনেক ঘাঁটাঘাটি করে আরও দু'টো পোস্টার পাওয়া গেল।
(ঝলক দিখলাযা)
(বিয়োবার দেরি নাই, - রুপ ঝরে পড়ে তার)
এবার চলুন, সিনেমাগুলোও দেখি। অসম্ভব র্যোমান্টিক এগুলো, নির্দ্বিধায় উত্তম-সুচিত্রা এগুলোর গলায় হার মানা হার পরিয়ে দেবে।
Kobita
by Jaher Wasim on Saturday, August 29, 2009 at 6:36am
একটি নোংরা কবিতা
যখন আকাশ ভেংগে পড়ার মত
সব অশ্রাব্য কবিতাগুলো আমার মাথায় আঘাত হানে
আমি তখন কিছুদিন আগে গর্ভবতী তরুনীর মত বমি করে দেই
ভালো মানুষ সাজা প্রানী গুলোর গায়ে
যারা ভাবে তারা কবি, অনেক কাব্য বুঝে...
ওগুলো পড়ে থাকে যৌবনের কলংক হয়ে
আমার বাড়ির আঙ্গিনায়
অথবা যেখানে মিলেছিলাম আমরা
সেই নোংরা বিছানায়।
আমার কবিতাগুলো পড়ে থাকে
ধুলোমাখা কোন রাস্তায়-টোকাইরা কুড়িয়ে নেয়
বিকিয়ে দেয় কোন রেস্তরার মালিকের কাছে
নাস্তা খাওয়ার পর হাত মুছার জন্য...
অথবা কারো টয়লেট পেপার হয়ে পড়ে
সেই সব কাব্য
কিংবা বাতাসে কোন পাগল তরুনের গায়ে এসে পড়ে সেই কবিতা
আশ্রয় খোঁজে আবার রাস্তায় বা ড্রেনে
কোন পতিতার গড়াগড়িতে মচমচ করে কবিতা
আমারি মত কোন যুবকের পাঞ্জাবীর পকেটে
দিন দিন থেকে মলিন হয়
অথবা পত্রিকা অফিসের ঝুড়িতে
এমনকি থাকতে পারে পোস্ট অফিসের কোনে সহস্র বছর ধরে
কোন এক পোস্ট মাষ্টারের কন্যা পড়ে দেখে সেই কাব্য
আর ভাবে কবি যুবকের কথা।
(দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া)
সম্পর্কের টানাটানি
by Jaher Wasim on Sunday, August 30, 2009 at 10:25pm
সম্পর্কের দাঁড়িপাল্লাটা
ছোট হয়ে আসছে দ্রুত
আগের মত নেই
বন্দী হয়ে যাচ্ছি কুয়ার অন্ধকারে।
ও ঘরের মেয়েটা
অনেক ভাবায় আমায়
আপু ডাকি
কত পবিত্রতা
অথচ স্বপ্নের মাঝে দুজনে আকাশপাতাল দেখি
অশ্লীলতার সমুদ্র পাড়ি দিই
চলে যাই অনেক দূর
তারপর তরী ডুবিয়ে দেই
ভেসে থাকতে পারিনা
ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকি
জগতের সব ক্লান্তি ভর করে
একা হয়ে যাই
মেয়েটাকে দেখিনা আর
শুধু দেখি ক্লান্ত অবসন্ন আমি
শুয়ে আছি বিছানায়
একা।
(চিনিলে না আমারে কি, চিনিলে না)
...........................
(চোখে চোখ রাখো)
(দেখতে আমি পাইনি)
(তুমি দেখেছ কি)
গত জুলাইয়ের সাতাশের কিছু আগে সে ফেসবুকে বসতি গাড়ে। তারপর থেকে সে এই মহৎ কর্মগুলোই করে গেছে।
তসলিমা নাসরিনের ভুয়ো একটা জিমেইল আইডি খুলে সে একটা ফেসবুক আস্তনাও করেছে, সেটা দেখলেই বোঝা যায় সেটা ভুয়ো। মাত্র তিনজন বন্ধু তাতে।
(আঁখির কোণে পাখির বাসা, দেখতে নারি কি তামাশা)
আর আসল তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকে বন্ধু ৩৬৪৫ জন।
(চক্ষে আমার তৃষ্ণা)
এবার জাহের ওয়াসিমের মুখোশের তলের ক্কিছু মুখ দেখুন। -
(বহুরূপী)
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন
তসলিমা নাসরিন দেশে নেই আজ ১৬ বছর। আজও তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে অহরহ মিথ্যাচার করছে মানসিক সমস্যার শিকার কিছু মানুষ। তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে, নিজে আজেবাজে লেখা লিখে তাঁর নামে চালিয়ে দিচ্ছে, আরও কত কি! এর মানে তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে এখনও লোকের মাথা ব্যাথা করে। এখানেই তসলিমা নাসরিনের জীবনের স্বার্থকতা। তিনি কারুর মাথা ঠিক করে দিয়েছেন, কারুর মাথা ব্যাথা করে দিয়েছেন। যাদের মাথা ঠিক করে দিয়েছেন, তারা তো "আল্লার ওয়াস্তে" বেঁচেই গেল। ওদিকে যাদের মাথা ব্যাথা হয়ে গেল, তাদের মাথা ব্যাথা জীবনেও সারবে না। আইনস্টাইনের সূত্রমতে সারা জীবন ধরে তারা পাগলামি করেই যাবে।
(তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়)
তসলিমা নাসরিনের নামের বানানটাও না জেনে যা খুশি তাই লিখে তসলিমা নাসরিনের নামে চালিয়ে দেবে, কেউ সে লেখা নকল তা যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ উৎপাদক গ.সা.গু উপপাদ্য সম্পাদ্য করে প্রমাণ করলেও থামবে না, বলেই যাবে, চেঁচাতে চেঁচাতে রসাতলে যাবে, গোল্লায় যাবে, তবু চেঁচিয়ে যাচ্ছে চেঁচিয়েই যাবে (তারা যেসব লিখবে, ওর চেয়ে অনেক বেশি ছাইভস্ম লিখে রেখে গেছে হুমায়ুন আজাদ, "সবচে সুন্দর মেয়ে দুটি হাতে টেনে......"র কাছে তো ওসব কিছুই না। হুমায়ুন আজাদ লিখলেও দোষ হবে না, তসলিমা নাসরিন না লিখলেও দোষ হবে। তসলিমা নাসরিন একবার কারণটা বলেছিলেন - "তসলিমা নারী ছিল, এই ছিল সমস্যা। তসলিমার মুখে অমন সব কথা মানাত না, পুরুষরা বললে মানিয়ে যায়। আর, সত্য কথা হল, পুরুষের জন্য পুরুষরা বুক চিতিয়ে দাঁড়ালে মানায়, কোনও নারীর জন্য দাঁড়ালে কেমন মেনি মেনি লাগে, মাগী মাগী লাগে।")
(বিরাজ সত্যসুন্দর)
এসবে আখেরে তসলিমা নাসরিনের কোন ক্ষতি নেই। তাঁর কিছুই যায় আসবে না। শুধু জাহের ওয়াসিম আল্লার (যদি সে থাকে) আর এই নষ্ট সমাজের নেকনজরে পড়বে। তাতে তার ইহলোক ও পরলোকে অশেষ নেকী হাসিল হবে, অনেক স্বার্থ সিদ্ধি হবে। যখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তসলিমা নাসরিনের সব ক'টা আত্মজীবনী মানবাধিকার বিভাগে পাঠ্য হয়ে গেছে এবং পড়ানো হচ্ছে ও হবে, তখন তার ভুয়ো কবিতাগুলো পড়ে ব্লগে ব্লগে মিচকে মগজহীন কতগুলো শয়তান মুহাহাহা করে হেসে উঠছে ও উঠবে। এবং এক সময় তার ও য়চিনপুরের (কিম্বা তার ওরফে য়চিনপুরের )মৃত্যু হবে। ইতিমধ্যেই তসলিমা নাসরিনের নামে প্যারিসে একটা উপসালা শহর উৎসর্গ করা হয়েছে, সেখানে সারা দুনিয়ার সব নিপীড়িত লেখক সাংবাদিকেরা এসে আশ্রয় নেন। আর একশ বছর পরে যখন জাহের-য়চিনপুরের কবর পড়ে থাকবে কোন অচিনপুরের পারিবারিক গোরস্থানে, হয়ত তাদের বা তার বংশধরেরাও তাদের বা তার মাজার আর জিয়ারত করবে না; কিম্বা হয়তো তাও থাকবে না, বন্যার জলে ধুয়ে যাবে মাটিহাড়গোড়, তখন তসলিমা নাসরিনের শ্বেতপাথরের ভাস্কর্য দাঁড়িয়ে থাকবে তুলুজে বার্সেলোনায় গড়িয়াহাটায় মিরপুর সাড়ে এগারোয়।